কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাজু বাদাম বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে একটি। যা সবাই চিনেন, কাজু বাদামের এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা আপনি জানলে  ও এ সম্পর্কে পড়লে আজথেকেই তা খাওয়া শুরু করে দেবেন আসা করি। আপনাদের মাঝে কাজুবাদাম খাওয়ার কিছু উপকারিতা ও সঠিক নিয়ম, নিয়ে এই আর্টিকেলটি লিখছি আশা করি সম্পূর্ণ পড়লে বুঝতে পারবেন। 

কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাজু বাদাম মূলত দানাদার খাবারের মধ্যে কাজু বাদামের জুরি নেই। কাজু বাদাম গাছের আদি-নিবাস ব্রাজিলে হলেও, বর্তমানে সারা বিশ্বে উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোতে কাজু বাদামের ব্যাপক ফলন হচ্ছে।কাজু বাদাম ভারতেও অনেক হয়ে থাকে। এটিকে বাদাম বলা হলেও মূলত এটি একটি বীজ জাতীয় খাবার। 

পেজ সূচিপত্র : নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান, ক্লিক করুন 

ভূমিকা 

কাজু বাদাম একটি শুকনো ফল। কাজু বাদাম দেখতে অনেক টা মানুষের কীডনির মতো হয়ে থাকে। এটি অনেক ভাবে মানুষ খেয়ে থাকে। যেমন কেউ খালি মুখে খাই আবার কেউ রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্য রান্না করে খাই। কাজু বাদামের অসামান্য পুষ্টিগুণ আছে, চলেন তা জেনে নেওয়া যাক।

কাজু বাদামে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে

কাজু বাদাম একটি মূলত বীজ।  এটি মানুষ খেয়ে থাকে, এর মধ্যে অনেক পুষ্টি রয়েছে। কাজু বাদামের মধ্যে কি কি পুষ্টি রয়েছে আসুন জেনে নেয়া যাক । কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, ভিটামিন কে, ভিটামিন -ই, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, কপার, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ ও আন্টি অক্সিডেন্ট ভরপুর একটি খাবার হল কাজুবাদাম। এটি প্রায় সব ধরনের মানুসি পছন্দ করে থাকেন। এবং কাজুবাদাম খেতে অনেক সুস্বাদু। 

কাজু বাদামের উপকারিতা 

কাজু বাদামে রয়েছে অনেক পরিমান পুষ্টি। এটি আসলে কিডনির মতো দেখতে, মানুষ এটি খালি মুখেও খায় এবং রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্য রান্না করে খাই। বিশেষ করে সেমাইয়ের স্বাদ অন্যরকম বৃদ্ধি করে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, কাজু বাদামে এত পরিমান প্রোটিন পাওয়া যায়, যা মাংস রান্না করে প্রোটিনের সমপরিমাণ। আপনি যদি নিয়মিত কাজু বাদাম খেতে পারেন তাহলে যে যে উপকারিতা পাবেন সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আসুন সে সম্পর্কে জেনে নিই।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ :

কাজু বাদাম একটি বীজ। এটি মানুষের শরীরের জন্য অনেক উপকার। কাজু বাদামকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পাওয়ার হাউজ হিসেবে বলা হয়। কারণ কাজু বাদামের মধ্যে অনেক প্রোটিন থাকে যা মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী। 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ,চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি সহায়তা করে। এছাড়া কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বজায় থাকে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। 

ওজন কমায় 

আপনি যদি আপনার ওজন নিয়ে চিন্তা থাকেন তাহলে কাজু বাদাম খেতে পারে। কাজু বাদাম খেলে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।  অন্যান্য বাদামে বেশি পরিমাণ ক্যালরি থাকে যা মানুষের শরীরের ওজন বৃদ্ধি সহায়তা করে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে কাজু বাদামে যে পরিমাণ ক্যালরি থাকে, তার ৮৪ শতাংশই হজম করতে এবং চুষে নিতে পারেন মানব দেহ। 

এছাড়াও কাজু বাদাম প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা কমাতে এবং পেট ভরা করে রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতার মধ্যে এটি একটি খুব উপকারী উপায় হিসেবে কাজ করে। যা ওজন কমানোর জন্যও মানুষ কাজু বাদাম ব্যবহার করে থাকে। 

হাড়ের জন্য উপকারী কাজুবাদাম 

কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে খনিজ উপাদান ও ক্যালসিয়াম যা আপনার হার মজবুত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে হাড় ক্ষয় হয় না এর ফলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে আপনার শরীরের হাড় অনেক মজবুত হবে, এর জন্য প্রতিদিন কাজু বাদাম খাওয়া ভালো।

হার্টের জন্য উপকারী 

কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং স্টক যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে উপকারী হিসেবে কাজ করে। কাজু বাদামে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের হার্টের জন্য অনেক উপকারী। তাই আপনি যদি প্রতিদিন কাজু বাদাম খেয়ে থাকেন  তাহলে হার্ড ভালো রাখতে সহায়তা করবে কাজু বাদাম।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজু বাদাম

কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা রক্তের শর্করা পরিমাণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে । এর কারণে রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হিসাবে কাজ করে কাজু বাদাম। 

চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে কাজু বাদাম 

কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লুটেন ও জিরাক্স থিন অ্যান্টি  -অক্সিডেন্ট। যা আপনার চোখকে আলোক রশ্মি থেকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এতে করে চোখের ছানি পড়া,রাত কানা, কম দেখা,ইত্যাদি হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাই।

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে কাজুবাদাম 

ডায়াবেটিস বা প্রি- ডায়াবেটিস   থাকলে খাবারে কাজুবাদাম যোগ করা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কাজু বাদামে এর মধ্যে রয়েছে শর্করা, এটি রক্তের সাথে মিশে, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে কাজুবাদাম 

 যদি রক্তচাপের সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে প্রতিদিন এক মুঠ করে কাজুবাদাম খেতে পারেন।কাজু বাদামে রয়েছে ফ্যাট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, যা শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো ভাবে কাজ করে থাকে।

রক্ত রোধ দূর করে কাজুবাদাম 

কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টি। যার শরীরের জন্য অনেক উপকার, কাজু বাদামের  মধ্যে রয়েছে কপার ও তামা রয়েছে। তাই আপনি যদি রক্তস্বল্পতা জনিত সমস্যায় ভুগেন তাহলে আপনি নিয়মিতো কাজু বাদাম খেতে পারেন। কাজু বাদামের মধ্যে রয়েছে কপার ও তামা যা রক্ত রোধ দূর করে। রক্তে কপারের  অভাব হলে লৌহ সল্পতা দেখা দেয় যার ফলে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত কাজু বাদাম খেলে এই সমস্যা হবে না।

স্বাস্থ্যকর কপার পাওয়া যায় কাজু বাদামে

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে, লোহিত রক্ত কণিকা বাড়াতে, হাড় মজবুত করতে এবং সংযোগ টিস্যু সুস্থ রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে সহায়তা করে কাজু বাদাম। এক কথায় শরীর সুস্থ রাখতে কাজু বাদামের অবদান অনেক বেশি। 

কোষের ক্ষয় রোধ করে 

কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে শরীরের সকল কোষ কোন ক্ষয় হয় না। যা শরীরের জন্য অনেক উপকারে। বাদাম ও বীজ উপকারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্রি-রেডিকেল, হওয়ার কারণে দেহের ক্ষতি কমায়। 

  হৃদ যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে কাজুবাদাম 

একটি বিজ্ঞানে গবেষণায় বলে গেছেন, ২০০৭ সালে ব্রিটিশ জার্নাল আব নিউট্রিশন ইয়ে প্রকাশিত পর্যালোচনা থেকে দেখা গেছে, সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ বারের বেশি কাজু বাদাম খাওয়া হৃদ রোগের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত কমায়। এর জন্য প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ বার কাজু বাদাম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে কাজু বাদাম 

যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা ভুগছেন তাদের জন্য অনেক কার্যকারী হচ্ছে কাজু বাদাম। আপনি যদি কাজু বাদাম রাতে দুধের সাথে ভিজিয়ে রাখেন এবং সকালে উঠে যদি খেতে পারেন তাহলে আপনার কোন কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না। এর জন্য প্রতিনিয়ত কাজু বাদাম খেলে শরীর সুস্থ থাকে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কাজুবাদাম 

আপনি বুঝতে পারছেন দিনদিন শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, কোন কাজ করতে লাগলে শক্তি পাচ্ছেন না। এমনটা হলে প্রতিদিন দুধের সাথে কাজু বাদাম খাবেন, করণ তা জেনে নিয় কাজু বাদামে রয়েছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ও মিনারেল ইত্যাদি যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বারতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। 

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম 

কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে। তাই কাজু বাদাম নিয়মত খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। তবে কাজু বাদাম কিভাবে বা কি নিয়মে খাবেন তা জানা অত্যন্ত দরকার। এর জন্য প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কেন খাবেন? এবং সকালে না রাতে খাবেন, সময় আপনাকে নির্ধারিত করতে হবে। 

যদি আপনি ডায়েট এর জন্য খেয়ে থাকেন তাহলে সকালের নাস্তার পর এবং দুপুরের খাবার আগের সময় খেতে হবে। যেমন: ১১:৩০-১টার মধ্যে হাতের মুঠের এক মুঠ বাদাম খেতে হবে। আবার বিকেলেও যখন হালকা ক্ষুধা লাগবে তখন নাস্তা হিসেবে অন্য খাবার না খেয়ে এক মুঠ কাজু বাদাম খেতে হবে। বিকালের সময় হচ্ছে ৪ টা থেকে ৫:৩০ পর্যন্ত এই সময়টুকুর মধ্যে খেতে হবে। এতে আপনার ক্ষদাও চলে যাবে সেই সাথে আপনার ডায়েটও ঠিক থাকবে। 

ডায়েট ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে খেয়ে থাকেন তাহলে ১০-১৫ টি বাদাম রাতে দুধের সাথে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা খেয়ে নেবেন। অতিরিক্ত মাত্রায় কাজু বাদাম খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে কিন্তু শরীরের উপকারের পরিবর্তে অপকারটাই বেশি হবে। তাই সব সময় খেয়াল রাখবেন মাপ মতো প্রতিদিন কাজু বাদাম খাওয়া। 

কাজু বাদামের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক 

কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা থাকলেও যেমনটি সঠিক খাদ্য সামগ্রী হিসেবে কাজু বাদাম উপকারী, তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা রয়েছে। যেমন অতিরিক্ত কাজু বাদাম শরীরের জন্য ক্ষতিকর, আরো অনেক দিক রয়েছে আসুন জেনে নেয়া যাক অপকারি বা ক্ষতিকর দিক নিচে তুলে ধরা হলো:

অ্যালার্জির ঝুঁকি 

কাজু বাদাম একটি বাদাম প্রজাতির যা কিছু মানুষের জন্য অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাদের জন্য কাজু বাদাম ক্ষতিকর। যাদের অতিরিক্ত এলার্জি বা চুলকানি আছে তাদের কাজু বাদাম না খাওয়াই উচিত। কারণ এটি খেলে এলার্জি বাড়তে পারে।  

তাড়াতাড়ি ব্যাধি 

কাজুবাদাম গ্রাসীমার সাথে যুক্ত হলে কিছু মানুষের তাড়াতাড়ি ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। যারা তাড়াতাড়ি ব্যাধির ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আমাদের এই সমস্যা থাকলে কাজু বাদাম খাওয়া চলবে না। 

অতিরিক্ত সার 

কাজু বাদামের মধ্যে অতিরিক্ত সার থাকতে পারে, যেমন লেখক অক্সালিক অ্যাসিড এবং ফ্যাটিক এসিড। এই সার গুলির অতিরিক্ত পরিমাণ আপনার শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই কাজুবাদাম আমাদেরকে সাবধানে খেতে হবে যার শরীরে এলার্জি বা চুলকানি আছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাজুবাদাম খেতে হবে। 

লেখকের  শেষ মন্তব্য :

আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য অনেক ফল খেয়ে থাকি। এর মধ্যে কাজু বাদাম একটি অনেক পুষ্টিমান খাদ্য, উপরের আলোচনায় সব রকম সব ভাবে বলা হয়েছে, আশা করি সব বুঝতে পারছেন। কাজু বাদামের উপকারিতা দিক এবং অপকারি দিক সম্পর্কে বলা হয়েছে বা কোন অসুখের জন্য কোন সময় খেতে হবে এটাও বলা যে হয়েছে আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনাদের বুঝতে কোন সমস্যা হবে না, আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে,  আপনাদের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url