খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জেনে নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কেননা খেজুরের গুড়ের এমন সকল গুনাগুন পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আসুন খেজুরে গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্র: খেজুরের গুড়ের সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
- খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
- খেজুরের গুড়ের পুষ্টির উপাদান
- খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম
- খেজুরের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে?
- খেজুরের গুড় কেন খাবেন আপনারা তা জানুন।
- খেজুরের গুড় কোথায় পাওয়া যাই
- খেজুরের গুড় দিয়ে কি জিনিস তৈরি করা হয়
- খেজুরের গুড় কি আয়রন সমৃদ্ধ
- খেজুরের ঝোলা গুড়
- ত্বক ভালো রাখে খেজুরের গুড়
- নারীদের জন্য উপকারী খেজুরের গুড়
- হজম সমস্যা দূর করে খেজুরের গুড়
- লেখকের শেষ মন্তব্য : খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো আজকের এই আর্টিকেলে। শীতকালে খেজুর রস যেমন জনপ্রিয় তেমনি খেজুরের গুড় হল একটি জনপ্রিয় খাবার। শীতকালে খেজুরের গুড় ছাড়া যেন শীত মানায় না। কেননা শীতকালে বাঙালিরা এই খেজুরের গুড় দিয়ে নানা পদের পিঠাপুলি বানিয়ে থাকেন। যা খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। আজ আমরা খেজুরের গুড় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা:
- শীতের সময় সবচাইতে যে রোগটি বেশি হয় তা হলো সর্দি-কাশি এবং জ্বরে ইত্যাদি অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। এই রোগ গুলো থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য অনেক সহায়তা প্রদান করে খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে এ ধরনের রোগের সমস্যা থেকে অনেক টাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
- খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ খেজুরের গুড়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এটি ত্বকের সতেজ ভাব বজায় রাখে এবং ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি প্রদান করে থাকেন। খেজুরের গুড় স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
- অনেক মানুষের এলার্জি সমস্যা থাকে। এ সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্য আপনি যদি নিয়মিত এক চামচ করে খেজুরের গুড় খেতে পারেন। তাহলে অনেকটাই এলার্জি থেকে মুক্তি পাবেন।
- অনেক মানুষ ওজন নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করে থাকেন। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত খেজুর গুড় খাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন বা নিয়মিত খেজুরের গুড় খেতে পারেন। তাহলে আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকবে। কারণ খেজুরের গুড়ের মধ্যে রয়েছে উচ্চ পটাশিয়াম যুক্ত হওয়ার কারণে শরীর থেকে পনিরভাব কমিয়ে দেওয়ার ফলে খুব সহজে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
- যাদের শরীরে রক্তের অভাব রয়েছে বা যারা রক্তস্বল্পতা জনিত রোগে ভুগছেন। তাদের জন্য খেজুর গুড় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কারণ খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে এ ধরনের রোগের হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
- খেজুরের গুড়ে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি। এই উপাদানা গুলো থাকার কারণে এটি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই আপনারা চাইলে প্রতিদিন এক চামচ করে খেজুরের গুড় খাওয়ার চেষ্টা করবেন। খেজুরের গুড় শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
- শীতকালের সময় শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত বা দুর্বল হয়ে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত খেজুরের গুড় খেয়ে থাকেন, তাহলে এর ফলে শরীরের ক্লান্তির ভাব কমে আসবে এবং শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
- খেজুরের গুড় নারীদের জন্য অনেক ভালো একটি খাবা। খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে মাসিকের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও এগুর দেহে এন্ডোরফিন্স নিঃসরণ করে থাকে। যেটির ফলে শরীরকে সুস্থ রাখে এবং সেই সাথে পেটের ব্যাথা থাকলে তা প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনেকটাই পালন করে।
- খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে শরীরের হাড় গুলো অনেকটাই সুস্থ এবং মজবুত হয়ে থাকে। কেননা খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর কারণে হাড় গুলো অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এবং এই উপাদানটি শরীরের হাড়কে মজবুত রাখার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে শরীরের আয়রনের ঘাটতি দুর হয়ে যাই। কেননা এই ঘুরে আয়রন সমৃদ্ধ প্রোটিন থাকে। যার কারনে এই গুড় খাওয়ার ফলে আয়রনের অভাব হওয়ার যাবতীয় রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
- মেয়েদের শরীরের জন্য খেজুরের গুড় অনেক অনেক বেশি উপকারী। কারণ মেয়েদের এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যা যেকোন খাবার খেলে সেরে উঠবে না। সেই কারণে এসব রোগের জন্য খেজুরের গুড় অনেক উপকারী। খেজুরে গুড়ের পুষ্টি উপাদান গুলো মেয়েদের শরীরে সমস্যা গুলো দূর করার ভূমিকা পালন করে থাকে।
- মানবদেহে লিভারের কার্যকারিতা সঠিকভাবে বজায় রাখার জন্য খেজুরের গুড় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে থাকা সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরের পেশী কে শক্তিশালী রাখার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা :
- খেজুরের গুড়ের উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেজুরের গুড়ের সীমাবদ্ধ রয়েছে যেমন বেশি খেজুরের গুড় একসাথে খাওয়া যাবেনা। এর ফলে পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে। তাই আমরা খেজুরের গুড় মাপ মত খাওয়ার চেষ্টা করবো। অতিরিক্ত খেজুর গুড় খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করা পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। খেজুর গুড় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এইসব জীবাণু দেহের মধ্যে প্রবেশ করে এবং এর ফলে শরীর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
- আর গরমকালে যদি গুড় খাওয়া হয় সেক্ষেত্রে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার খেজুরের গুড় তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে যদি খাওয়া হয় তাহলে ডায়রিয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাই এই সমস্ত বিষয়গুলো খেয়াল রেখে গুড় খাওয়া উচিত। তা না হলে ছোট সমস্যা থেকে বড় সমস্যা আকার ধারণ করতে পারে। তাই আমরা খেজুরের গুড় মাপ মতো খাবার চেষ্টা করব।
খেজুরের গুড়ের পুষ্টির উপাদান
শীতকালে খেজুরের রস যেমন আমাদের সবার প্রিয় একটি খাবার তেমনি খেজুরের রস দিয়ে তৈরি খেজুরের গুঁড়ো অনেক জনপ্রিয় একটি খাবার। শীতকালে আমরা বিভিন্ন রকমের পিঠাপুলি পায়েস ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এর মূল উৎস হলো খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড়ে রয়েছে অনেক পরিমান পুষ্টি, যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরের গুড় আমরা চিনির বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করে থাকি।
খেজুরের গুঁড় প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি হওয়ার ফলে, এতে অনেক প্রকার নিউট্রিশন রয়েছে যা আমাদের মানব শরীরের অনেক পরিমাণ শক্তি যোগাই দেই। চিনির তুলনায় গুড় অনেক বেশি উপকারী কারণ হলো ১০০ গ্রাম করে প্রায় ২৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে থাকে খেজুরের গুড়ে। এছাড়াও যাদের মিষ্টিতে অনেক বেশি সমস্যা হয়ে থাকে তারা চাইলে গুড় অল্প পরিমানে খেতে পারে। কারণ খেজুরের গুড়ে অনেক পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে, যেমন: আয়রন, জিংক ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদি অনেক পরিমাণ পুষ্টি থাকে এই খেজুরের গুড়ে।
যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং শরীরে কোন অসুখ হলে তাড়াতাড়ি শরীর সুস্থ হতে সহায়তা করে। যারা রক্তস্বল্পতায় রোগে ভোগে তাদের জন্য এটি আরও বেশি উপযোগী। খেজুরের গুড় প্রতিদিন খেলে রক্তস্বল্পতায় এই রোগটি হবে না। খেজুরের গুড়ে যেহেতু সুগারের পরিমাণ খুবই কম থাকে সে ক্ষেত্রে আপনারা চাইলে ডায়াবেটিস রোগীদেরকেও স্বল্প পরিমাণে এই খেজুরের গুড় খাওয়াতে পারেন। সর্বশেষে বলা যায় যে খেজুরের ঘুরে এই সকল সমস্ত পুষ্টিগুণ উপাদান থাকে।
খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম
আপনাদের খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হলো খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে নানা রকম উপকারিতা হয়ে থাকে। এই সকল উপাদানটা সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য সঠিক নিয়ম মেনে এটি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে সবাইকে। তাহলে আসুন তার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে নিন
আমরা প্রায় বিভিন্ন ভাবে খেজুরের গুড় খেয়ে থাকি। যেমন কেউ ঝোলা গুড় খায় আবার কেউ পাটারি গুড় খায়। তবে গুড় খাওয়া তেমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে খেজুরের গুড়ি নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যর জন্য অনেক উপকার হয়। তবে অতিরিক্ত গুড় খাওয়া যাবেনা,নির্দিষ্ট পরিমাণে গুড় খেতে হবে। তারপরও কিছু নিয়ম আছে তা এখন বলবো।
আপনারা সকালের নাস্তার পর অল্প করে খেজুরে গুড় খাবেন। তাহলে সারাদিনে অনেক পরিমাণে ক্যালোরি বা শক্তি শরীরে অনেক পরিমাণ পাবেন। যা শরীরের দুর্বল ভাব আসবে না, তাছাড়া আপনারা কোন ভারি খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে সঠিকভাবে হজম হওয়ার জন্য খেজুর গুড় খেতে পারেন। এর ফলে হজম প্রক্রিয়ার দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হবে। এবং শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খেজুরের গুড়। আপনারা দিনে এক থেকে দুই চামচ করে খেজুরের গুড় খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এর বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন না তাহলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে। আশা করি সম্পূর্ণ বুঝতে পারছেন।
খেজুরের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে?
খেজুরের গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে এই সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে ওজন কমে থাকে। কারণ খেজুরের গুড়োর হচ্ছে উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার, যার কারণে এই গুড় খাওয়ার ফলে দেহের পনিরভাব কমিয়ে থাকে। আর এর ফলে মানব শরীর নিয়ন্ত্রণে আসে। খেজুরের গুড় উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এই গৌর অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে শরীরের অনেক ক্ষতি হবে। এর জন্য আমরা নিয়মিত মাপ অনুযায়ী খেজুরের গুড় খাওয়ার চেষ্টা করব। তাই খেজুরের গুড় প্রয়োজন মত খাওয়ার চেষ্টা করব।
খেজুরের গুড় কেন খাবেন আপনারা তা জানুন
খেজুরের গুড় কেন খাবেন এই সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। আজকের এই আর্টিকেলে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক। খেজুর গুড় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। তাই আপনারা খেজুরের গুড় নিয়মিত খাবেন। খেজুরের গুঁড়ে উপকারিতা কি তা নিচে দেওয়া হল :
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে খেজুরে গুড় অনেক ভূমিকা রাখে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে খেজুরের গুড়।
- শরীরের ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করে থাকে।
- লিভার কার্যকারিতা বজায় রাখে।
- নারীদের নানা অসুখে ভূমিকা রাখে এই খেজুরের গুড়।
- শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, বদহজম দূর রাখে এই খেজুরের গুড়।
- পেট পরিষ্কার রাখতে ভূমিকা পালন করে খেজুরের গুড়।
- হাড়ের ব্যথা কমায় এবং হারকে অনেক মজবুত করে খেজুরের গুড়।
খেজুরের গুড় কোথায় পাওয়া যায়
খেজুরের গুড় নানা জায়গায় পওয়া যাই যেমন: গ্রাম বাংলা বাঙ্গালীদের শীতকালে সবচেয়ে অতিবাহিত একটি খাবার হচ্ছে এই খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড়ের মূল উপকরণই হলো খেজুরের রস। কেননা খেজুরের রস এর মাধ্যমে জাল দিয়ে খেজুরের খাটি গুড় তৈরি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতে খেজুর গুড় অনেক পরিমানে পাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলগুলোতে এটির চাহিদা অনেক বেশি এবং অনেক পরিমানে দেখা যায়। শহরে এটির চাহিদা রয়েছে কিন্তু শহরে এটি তৈরি করা হয় না।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে এগুলো গুড় অনেক বিখ্যাত যেমন: রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল, পঞ্চগড় ইত্যাদি বিভিন্ন জেলায় খেজুরের রস দিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে রাশিয়াতে খেজুর গুড় প্রতি কেজি প্রায় ২০০ টাকা। ঢাকাতে এটির দাম হয়তোবা একটু বেশি হবে। এছাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিনিকল হলো রাজশাহীর পাবনা জেলাতে। এই চিনির মূল উপকরণ হলো খেজুর রস অথবা কুসিলের রস এই দুইটি দিয়েই চিনি তৈরি করা হয়ে থাকে। খেজুরের গুড় মানব জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
খেজুরের গুড় দিয়ে কি জিনিস তৈরি করা হয়
খেজুরের গুড় দিয়ে কি তৈরি হয় এই সম্পর্কে আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। আজকের এই আর্টিকেলে এই সম্পর্কে কিছু কথা বলবো বা এই বিষয় নিয়ে জানানোর চেষ্টা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক। খেজুরের গুড় দিয়ে অনেক রকম জিনিস তৈরি করে খাওয়া যায়। যেমন: খেজুরের গুড় দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যায়। আপনি চিনির বদলে খেজুরের গুড় দিয়ে যদি চা তৈরি করে খান। তাহলে অনেক স্বাদ হবে। সেই সঙ্গে শরীরের অনেক উপকারে সাধিত হতে থাকবে। এছাড়াও খেজুরে গুড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি তৈরি করা হয়। এসব পিঠাপুলি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, সন্দেশ পিঠা ইত্যাদি অনেক রকম পিটাপুলি খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও খেজুরের গুড় ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু পায়েস খির ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে। যেটি খেতে অনেক মজাদার এবং সুস্বাদু হয়ে থাকে। এছাড়াও খেজুরের গুড় কে ব্যবহার করে মিষ্টি জাতীয় অনেক খাবার তৈরি করা হয়। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :নাড়ু, সন্দেশ ইত্যাদি। এছাড়া অনেক রকম মিষ্টি জাতীয় সুস্বাদু খাবার খেজুরের গুড় থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে।
খেজুরের গুড় কি আয়রন সমৃদ্ধ
খেজুরের গুড় একটি পুষ্টি কর খাবার। এর মধ্যে অনেক পরিমাণে ক্যালসিয়াম আয়রন সমৃদ্ধ থাকে। খেজুরের গুটি খাওয়ার ফলে শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়ে থাকে। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা যদি নিয়মিত এক থেকে দুই চামচ করে খেজুরের গুড় খেতে পারেন। তাহলে তার শরীরে আর আয়রনের ঘাটতি থাকবে না। এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণ সহ আয়রন জনিত যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে থাকেন। যেমন রক্তস্বল্পতা ইত্যাদি। এ রোগটি মূলত হয়ে থাকে আয়রনের ঘাটতির অভাবে। খেজুর গুড় খাওয়ার মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে থাকে। তাই যাদের দেহে রক্তের ঘাটতি রয়েছে তারা নিয়মিত খেজুরের গুড় খেতে পারেন।
খেজুরের গুড় আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা দূর করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া খেজুরের গুড়ে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপন্ন করতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও খেজুরে গুড়ে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান রয়েছে।যা শরীরকে সুস্থ রাখার সহায়তা করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা প্রতিনিয়ত খেজুরের গুড় খাওয়ার চেষ্টা করব।
খেজুরের ঝোলা গুড়
খেজুরের যেমন পাটারি বা খুরি গুড় রয়েছে তেমনি খেজুরের ঝোলা গুঁড়ো রয়েছে। খেজুরের ঝোলা গুড় এর জনপ্রিয় কম নয়। ঝোলা গুড় খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। ঝোলা গুড়ের গন্ধ অনেকের মন কেড়ে নেয়। অনেক কষ্ট সাধনার মাধ্যমে এই গুড় তৈরি করা হয়। খেজুরের ঝোলা গুড় খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। যদি নিয়মিত গুড় খাওয়া হয় তাহলে ক্ষতিকর টকিন গুলো দুর হয়ে যাই। যার ফলে লিভারের যে ক্ষতিকর trocking গুলো থাকে সেগুলো বের করতে সাহায্য করে। অনেক মানুষ রয়েছে যারা মিষ্টি খেতে পছন্দ করে না, যারা তেমন মিষ্টি খেতে পছন্দ করে না তাদের জন্য এই ঝোলা গুড় পারফেক্ট। কারণ এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের এই আর্টিকেলে আজ জেনে গেলাম খেজুরের ঝোলা গুড় সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।
ত্বক ভালো রাখে খেজুরের গুড়
ত্বক ভালো রাখে, এই কথা শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? অবাক করার বিষয় হলেও সত্যি যে, খেজুরের গুড় আপনার ত্বক ভালো রাখতে অনেক সহায়তা করে। আপনি যদি মসৃণ তক চান তাহলে নিয়মিত দুই চামচ করে প্রতিদিন খেজুর গুড় খাবে। এতে চেহারায় সহজে বয়সের ছাপ পড়বে না। ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করতেও এই গুড় অনেক কার্যকরী। ত্বক সুন্দর থাকুক তা কে না চাই। ত্বক সুন্দর রাখতে নিয়মিত খেজুর গুড় খেতে হবে।
নারীদের জন্য উপকারি খেজুরের গুড়
নারী এবং পুরুষের শরীরের গঠন এক নয় অনেক টাই আলাদা। নারীদের শরীরের জন্য এমন কিছু পুষ্টিকর খাবার দরকার পড়ে। যা সব ধরনের খাবারে থাকে না। এক্ষেত্রে একটি উপকারে খাবার হতে পারে খেজুরের গুড়। এতে থাকা নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান নারীদের বিভিন্ন অসুখ থেকে দূর করে থাকে। তাই নিয়মিত খেজুরের গুড় খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
হজম সমস্যা দূর করে খেজুরের গুড়
যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন বা যাদের বদ হজম বেশি হয়। তারা প্রতিদিন অল্প করে খেজুরের গুড় খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যারা নিয়মিত খেজুরের গুড় খান তারা এর সুফল পাচ্ছেন। খেজুরের গুড় অনেক ওসুখ থেকে মুক্তি দেয়। যেমন: আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য, আমসা, বদ হজমের মতো অসুখ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে। তাই আমরা প্রতিদিন অল্প করে খেজুর গুড় খাওয়ার চেষ্টা করব।
লেখকের শেষ মন্তব্য : খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিশেষে খেজুরের গুড়ের গন্ধে মন কেড়ে নেয় এবং খেতে খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানতে পারলাম খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। এর পাশাপাশি আরো জানলাম খেজুরে গুড়ে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এবং খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সমস্ত বিষয় নিয়ে এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। মন দিয়ে পড়লে আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি বুঝতে পারবেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন, তাহলে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরবর্তী আরেকটা আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে আসবো ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url